
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া (Dementia) একটি মস্তিষ্কজনিত রোগ, যা ধীরে ধীরে মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা হ্রাস করে। এটি বার্ধক্যের একটি সাধারণ রোগ হলেও, এটি স্বাভাবিক বয়সজনিত ভুলে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর।
ডিমেনশিয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহ
ডিমেনশিয়া বিভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- সাম্প্রতিক ঘটনা বা কথা ভুলে যাওয়া
- সহজ সিদ্ধান্ত নিতে না পারা
- পরিচিত স্থানেও পথ ভুলে যাওয়া
- কথা বলতে বা শব্দ খুঁজে পেতে সমস্যা
- আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন, বিষণ্ণতা বা উদ্বিগ্নতা
- দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হওয়া
ডিমেনশিয়ার প্রধান কারণসমূহ
ডিমেনশিয়া নিজে কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং এটি একাধিক রোগের সম্মিলিত লক্ষণ। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- অ্যালঝেইমার ডিজিজ (Alzheimer’s Disease): সবচেয়ে সাধারণ এবং ধীরে ধীরে উন্নতি হওয়া ডিমেনশিয়া।
- ভাসকুলার ডিমেনশিয়া: মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের সমস্যা বা স্ট্রোকের পর ঘটে।
- লুই বডি ডিমেনশিয়া: বিভ্রম, ঘুমের সমস্যা ও চলাফেরার জটিলতা সৃষ্টি করে।
- ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া: ব্যক্তিত্ব ও ভাষাগত সমস্যা দেখা যায়।
কে ঝুঁকিতে আছেন?
নিম্নলিখিত কারণে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে:
- বয়স ৬৫ বছরের বেশি
- পারিবারিক ইতিহাসে ডিমেনশিয়া থাকা
- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ
- ধূমপান ও মদ্যপান
- মাথায় আঘাত
- কম শিক্ষা বা কম মানসিক ব্যায়াম
ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে যা করবেন
সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও কিছু উপায়ে ঝুঁকি কমানো যায়:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য (সবজি, ফল, বাদাম, মাছ)
- নিয়মিত ব্যায়াম ও হাটাহাটি
- মানসিক ব্যায়াম (পাজল, পড়ালেখা, গেমস)
- সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা
- পর্যাপ্ত ঘুম
- রক্তচাপ ও সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা
বর্তমানে ডিমেনশিয়ার স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে কিছু ওষুধ ও থেরাপি রোগীকে স্বস্তি দিতে পারে:
- ওষুধ: Donepezil, Rivastigmine, Memantine
- কগনিটিভ স্টিমুলেশন থেরাপি (CST)
- পরিবারের সহানুভূতিশীল যত্ন ও পরিপূর্ণ সেবা
- ডায়েট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন
আপনার প্রিয়জনের পাশে থাকুন
ডিমেনশিয়া রোগীরা প্রায়ই একাকীত্ব, অবহেলা ও মানসিক অবসাদে ভোগেন। তাই ধৈর্য, সহানুভূতি ও ভালোবাসা দিয়ে তাঁদের জীবন সুন্দর ও সহজ করে তুলুন।
উপসংহার
ডিমেনশিয়া একটি জটিল কিন্তু সচেতনতার মাধ্যমে মোকাবেলা-যোগ্য সমস্যা। সময়মতো চিকিৎসা ও সঠিক তথ্যই হতে পারে এ রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। চলুন, নিজের পরিবার ও সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দিই – একটি স্মৃতিময় সুন্দর জীবনের জন্য।